দাড়ি রাখা অবশ্য পালনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত।
রাসুল (সা.)-এরপ্রতিটি হাদিস মুমিনের জন্য অনুকরণীয় ও অনুসরণীয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশ মান্য করো এবং শোনার পর তা থেকে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা : আনফাল, আয়াত: ২০)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘রাসুল তোমাদের যা আদেশ দেন, তা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাকো এবং আল্লাহকে ভয় করো। নিশ্চয় আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।’ (সুরা : হাশর, আয়াত : ৭)
দাড়ি রাখা অবশ্য
পালনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। উক্ত মর্মে বিভিন্ন আদেশ সূচক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে
(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৪৪২১; মুসলিম হা/৬২৫-২৬)।
অতএব দাড়িকে (কোন
প্রকার কাটছাট ছাড়াই) স্বীয় অবস্থায় ছেড়ে দেওয়াই পুরুষের জন্য সুন্নাত এবং সৌন্দর্যের
প্রতীক।
অতিরিক্ত লম্বা
হওয়ার বিষয়টি মূলত হরমোনগত কারণে হয়ে থাকে। যেমনভাবে রোগের কারণে কোন কোন নারীর দাড়ি-গোফ
গজায়। এরূপ অস্বাভাবিক অবস্থায় বিভিন্ন অসুবিধা সৃষ্টি হ’লে মাত্রাতিরিক্ত অংশ কেটে
ফেলায় দোষ নেই (যুরকানী, শরহ মুওয়াত্ত্বা ৪/৫৩০)।
(আত-তাহরীক)
দাড়ি রাখা অবশ্য পালনীয় একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত। |
রাসূল (ছাঃ) দাড়িছাটতেন বা কাটতেন মর্মে কোন দলীল নেই। বরং উম্মতের উদ্দেশ্যে তিনি বলে গেছেন, ‘তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি লম্বা কর, গোঁফ ছোট কর’ (বুখারী হা/৫৮৯২; মিশকাত হা/৪৪২১)।
তিনি দাড়ি ছাটতেন
মর্মে তিরমিযীতে যে হাদীছটি বর্ণিত হয়েছে তা মাওযূ‘ বা জাল (যঈফ তিরমিযী হা/২৭৬২; সিলসিলা
যঈফাহ হা/২৮৮, ১/৪৫৬ পৃঃ)।
আলবানী (রহঃ) বলেন,
‘জেনে রাখ হে পাঠক! দাড়ি ছাটার পক্ষে রাসূল (ছাঃ) থেকে একটি ছহীহ হাদীছও প্রমাণিত হয়নি।
না তার কথা দ্বারা না তার কাজ দ্বারা’ (আলোচনা দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ ৫/৩৭৬ পৃঃ, হা/২৩৫৫)।
উল্লেখ্য, অনুরূপভাবে
হজ্জ বা ওমরা করার সময় ইবনু ওমর (রাঃ) এক মুষ্টির অধিক দাড়ি কেটে ফেলতেন মর্মে যে বর্ণনা
এসেছে, সেটা তার ব্যক্তিগত আমল। হজ্জ ও ওমরাহ ব্যতীত অন্য সময়ে তিনি এরূপ করতেন বলে
প্রমাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং তা দলীল হিসাবে গ্রহণীয় নয় (ফাৎহুল বারী ১০/৪২৮-২৯, হা/৫৮৯২-এর
ব্যাখ্যা দ্রঃ)। বরং গ্রহণযোগ্য হ’ল জনৈক ব্যক্তির প্রতি তাঁর স্পষ্ট নির্দেশনা- ‘তোমাদের
জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাত অধিক অনুসরণযোগ্য না ওমরের সুন্নাত?’ (আহমাদ হা/৫৭০০;
তিরমিযী হা/৮২৪, সনদ ছহীহ)।
ইমাম নববী (রহঃ)
বলেন, দাড়ি বিষয়ে হাদীছে পাঁচ ধরনের শব্দ এসেছে, যার সবগুলি একই অর্থ বহন করে যে, দাড়িকে
নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া (শরহ মুসলিম ৩/১৫১)। উছায়মীন (রহঃ) বলেন, যারা আল্লাহ ও তাঁর
রাসূল (ছাঃ)-এর অনুসরণ করতে চায়, তারা যেন অবশ্যই দাড়ির কোন অংশ না কাটে। কেননা শেষনবী
(ছাঃ) এবং তার পূর্বের কোন নবী দাড়ি কাট- ছাঁট করতেন না (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১১/৮২)।
শায়খ বিন বায (রহঃ)
বলেন, দাড়িকে তার নিজ অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ১০/৯৬-৯৭)। অতএব দাড়ির
কোন অংশে কাট-ছাঁট করার কোন সুযোগ নেই।ইবনে ওমর (রা.) বলেন, নবী করীম (সা.) বলেছেন,
তোমরা মুশরিকদের বিপরীত করবে- দাড়ি লম্বা রাখবে, গোঁফ ছোট করবে। (সহীহ বুখারি, হাদিস
নং–৫৪৭২)
বিখ্যাত তাবেয়ি ইমাম উবায়দুল্লাহ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে উতবা (রা.) বলেন, জনৈক অগ্নিপূজক আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে এসেছিল। তার দাড়ি মুণ্ডানো ছিল ও গোঁফ লম্বা ছিল। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, ‘এটা কী?’ সে বলল, ‘এটা আমাদের ধর্মের নিয়ম।’ আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘কিন্তু আমাদের দ্বিনের বিধান, আমরা গোঁফ কর্তন করব ও দাড়ি লম্বা রাখব।’ (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, হাদিস : ২৬০১৩)।
COMMENTS