শাবান মাসের ফজিল বা গুরুত্ব ।
কিন্তু আমরা শাবান মাসের ইবাদত বলতেই বুঝি মধ্য
শাবানের"শবে বরাত " এর রাত।
এখন আমরা শবেবরাত নিয়ে সংক্ষিপ্ত একটা আলোচনা করবো,
আলোচনার পূর্বে জানতে হবে, কোরআন এবং হাদীস আরবিতে নাযিল
হয়েছে সুতরাং সকল ইবাদত আরবি ভাষায় বিশ্লেষণ করে আমল করাই উত্তম ।
শবে বরাত মূলত ফারসি শব্দ,যদি এর বাংলা করি,শব অর্থঃ রাত
বা রজনী, বরাত অর্থঃ ভাগ্য, বরকতময়।সুতরাং এরবাংলা অর্থ ভাগ্য বা বরকতময় রজনী।
এখন বাংলা থেকে যদি আরবি করি,রাত বা রজনী অর্থঃ লাইলাতুলভাগ্য
বা বরকতময় অর্থঃ কদর
অর্থাৎ শবে বরাত এর আরবি শব্দ হলোঃ"লাইলাতুল
কদর"
আর আপনি নিশ্চয়ই জানেন "লাইলাতুল কদর"কোন মাসে
হয়(সূরা কদর)
জ্ঞানীদের জন্যই এতটুকুই যথেষ্ট।
এর পরেও হয়তো অনেকে বলবেন,আমরাতো জানি কদর অর্থঃ
সম্মানিত রাত বা মহিমান্বিত রাত।সুরা হজ্জ-আয়াত-৭৮-মাদানী-সুরা
প্রিয় বন্ধু, আপনি যদি (সূরা দুখানঃ১-৪) এই আয়াতগুলোর
ব্যাখ্যা দেখেন তাহলে দেখতে পাবেন বরকতময় বা ভাগ্য রজনী বলতে লাইলাতুল কদরকে
বুঝানো হয়েছে।
এখন হয়তো কেও বলবেন,বাপদাদারা কি হাদীস জানতো না, তারাতো
শতশত বছরদরে পালন করে আসছে।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো, মুসলিমরাও আজ হিন্দুদের মতো
বাপদাদাদের অনুসরণ করছে,,হিন্দুরা করতেই পারে কারণ হিন্দুদের প্রধান
ধর্মগ্রন্থ"বেদ" আনুমানিক সারে চার হাজার বছর পূর্বের যা সচারাচর পাওয়া
যায় না, কিন্তু মুসলিমরা কেন বাবদাদার অনুসরণ করবে যেহেতু তার টেবিল-আরমারিতেই
কোরআন-হাদীস সাজিয়ে রাখা আছে!! সুতরাং দলিল ছাড়া বাপদাদার বা কোন ব্যক্তির অন্ধ
অনুসরণ কখনো করা যাবে না।(সূরা বাকারঃ১৭০,আরাফঃ২৮)
এর পরেও অনেকে বলবেন,নিসফি মিন শাবান বা শাবান মাসের
মধ্যরাতের আমল সম্পর্কেতো হাদীস আছে, বন্দুরা
আমি এ জন্যেই বললাম কারো অন্ধ অনুসরণ করা যাবে না,
আপনাকে যে ব্যাক্তি মধ্য শাবানের ইবাদত সম্পর্কে হাদীস শুনিয়েছে তাকে উক্ত হাদীসের
সনদ এবং রাবী সম্পর্কে প্রশ্ন করুন।
মূলত, মধ্য শাবান নিয়ে, রোজা,মিলাদ-কিয়াম, হালুয়া
রুটি,সম্মিলিত দোয়া,নামাজ বা নামাজের রাকাত সংখ্যার ফযিলত,ইত্যাদি প্রায় সবগুলো
হাদীস বানোয়াট বা জাল, কিছু হাদীস যঈফ,,
এর পরেও হয়তো অনেকে বলবেন,আমরাতো এই রাতে গান-বাজনা করবো
না বরং আল্লহর নাম নিয়েই ইবাদত করবো এতে দুস কোথায়,আসলে এমন কথা আমরা অজ্ঞতার
কারণে বলে থাকি। প্রিয় বন্ধু,
ইবাদত এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এটি আপনাকে যেমন
জান্নাতে নিয়ে যাবে, ঠিক তেমনি সুন্নাহপরিপন্থি ইবাদত আপনাকে জাহান্নামে নিয়ে
যাবে।(মুসলিম মুকদ্দমাঃ১-৪) সুতরাং ভালো এবং ইসলামি বিষয় বলেই দলিল ছাড়া সেটাকে
ইবাদত মনে করা রসূল সাঃ এর উপর মিথ্যারোপ করার সামিল।
তবে,মধ্য শাবানের নির্ভরযোগ্য একটি হাদীস হলো, এই রাতে
মুশরিক এবং হিংসুক ব্যতিত আল্লহ তার বান্দাদের ক্ষমা করে দিবেন,(সুনান ইবনে
মাজাহ১৩৯০,,হাসান)
এই হাদীসের মূলভাব হলো আমার যদি মধ্য শাবানের পূর্বে
শির্ক এবং হিংসা থেকে মুক্ত হতে পারি তাহলে আমরাই সেই ক্ষমাপ্রাপ্ত দলদের মধ্যে
একজন হবো।ইনশাআল্লহ
আর এই হাদীস দিয়ে উপরের ইবাদতগুলো প্রমাণ করাটা মূর্খতা,
যদি তাই হতো তাহলে রসূল সাঃ এবং সাহাবী রাঃ এদের থেকে এই রাতের ইবাদত নিয়ে অন্তত
একটি সহীহ হাদীস থাকতো।
প্রিয় বন্ধুরা, মোটকথা হলো ইবাদতের জন্য কি রসূল সাঃ এর
আদর্শ যথেষ্ট নয়??সুতরাং আসুন শাবান মাসে কোন নির্দিষ্ট করে(শবে বরাত) নফল রোজা বা
নামাজ না পড়ে, রসূল সাঃ এর সুন্নাহ অনুযায়ী পুরো মাসটাই বেসি বেসি করে রোজা এবং
নামাজ আদায় করি।
আল্লহ বুঝার তৈফিক দান করুন( আমিন)
চারটি কাজ কখনো ছেড়ে দিবেন না। তাহলে দেখবেন
আপনি দুনিয়া ও আখেরাতে সফলকাম হবেন ইন শা আল্লাহ্।
কারন তখন আপনি সারা জাহানের মালিকের প্রিয়পাত্র
হয়ে যাবেন।
১. কখনও আল্লাহর শুকরিয়া আদায় থেকে নিজেকে
বিরত রাখবেন না; বা না শুকরি করবেন না। তাহলে তিনি আর বাড়িয়ে দিবেন না।
"যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় কর; তাহলে বাড়িয়ে
দিব।"
(সূরা ইব্রাহিম, আয়াত - ০৬)
২. কখনও আল্লাহর স্মরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন
না; তাহলে তিনি আপনাকে আর স্মরণ করবেন না।
"আমাকে স্মরণ কর; আমিও তোমাদের স্মরণ
করব।"
(সূরা বাকারা, আয়াত - ১৫২)
৩. কখন দোআ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন না;
তাহলে তিনি বিপদে আর আপনার ডাকে সাড়া দিবেন না।
"তোমরা আমাকে ডাক; আমি সাড়া দিব।"
(সূরা গাফির, আয়াত - ৬০)
৪. কখনও ক্ষমা চাওয়া থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন
না; তাহলে তিনি আর নাজাত/মুক্তি দিবেন না।
"আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থীদের তিনি আযাব দেন না অর্থাৎ মুক্তি দেন।"
(সূরা আনফাল, আয়াত - ৩৩)
প্রত্যেক ব্যক্তির আঙুলের ছাপ স্বতন্ত্র।
আমাদের সবার ইউনিক (অদ্বিতীয়) ফিঙ্গারপ্রিন্ট
(আঙুলের ছাপ) রয়েছে। এমনকি যমজদের ও আঙুলের ছাপ ভিন্ন। তবে ১৪০০ বছর আগে কেউ এ সম্পর্কে
জানত না। কিন্তু কুরআনে উল্লেখ রয়েছে যে কেয়ামতের দিন আল্লাহ মানুষকে সশরীরে পুনরুত্থিত
করবেন এমনকি একই আঙুলের ছাপ সহ ।
আজ বিজ্ঞান আবিষ্কার করেছে যে প্রত্যেক ব্যক্তির
অনন্য বা অদ্বিতীয় আঙ্গুলের ছাপ রয়েছে যা বায়োমেট্রিক আইডেনটিটি হিসেবে ব্যবহৃত
হয়।
أَيَحْسَبُ الْإِنْسَانُ أَلَّنْ نَجْمَعَ
عِظَامَهُ
بَلَىٰ قَادِرِينَ عَلَىٰ أَنْ نُسَوِّيَ بَنَانَهُ
[আল কোরআন ৭৫:৩-৪ ] মানুষ কি মনে করে যে, আমি
কখনই তার অস্থিসমূহ একত্র করব না? হ্যাঁ, আমি তার আংগুলের অগ্রভাগসমূহও পুনর্বিন্যস্ত
করতে সক্ষম।
কেয়ামতের দিন আল্লাহ আমাদের দেহকে নিখুঁতভাবে
সৃষ্টি করবেন এমনকি আমাদের অনন্য আঙ্গুলের ছাপগুলি পুনর্গঠন করবেন।
১৪০০ বছর আগে একজন নিরক্ষর মানুষ কীভাবে জানবে
যে প্রত্যেক ব্যক্তির আঙুলের ছাপ স্বতন্ত্র, যা বিজ্ঞান বর্তমানে আবিষ্কার করেছে?
অতএব, নিঃসন্দেহে আল কোরআন আল্লাহ তায়ালার বানী।
COMMENTS