জুমার দিন গুরুত্ব ও ফজিলত ।
জুমার দিনে-বেশি-বেশি-দরুদ-পাঠ-করাঃ
আওস ইবনে আউস রা.
থেকে
বর্ণিত, একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ
করেছেন-
ﺇﻥ ﻣﻦ ﺃﻓﻀﻞ ﺃﻳﺎﻣﻜﻢ ﻳﻮﻡ
ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ ... ﻓﺄﻛﺜﺮﻭﺍ ﻋﻠﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﺼﻼﺓ
ﻓﻴﻪ، ﻓﺈﻥ ﺻﻼﺗﻜﻢ ﻣﻌﺮﻭﺿﺔ ﻋﻠﻲ ...
নিশ্চয়ই
জুমার দিন শ্রেষ্ঠতম
দিনগুলোর অন্যতম।
...সুতরাং সেদিন তোমরা আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পড়। নিশ্চয়
তোমাদের
দরূদ আমার কাছে পেশ করা হয়।
(সুনানে
আবু দাউদ, হাদীস : ১০৪৭; মুসনাদে আহমদ, হাদীস : ১৬১৬২; সহীহইবনে হিববান, হাদীস : ৯১০,হাদীসটি
সহীহ)
অন্য হাদীসে আনাস রা.থেকে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ইরশাদ
করেন-
ﺃﻛﺜﺮﻭﺍ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻋﻠﻲ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ
ﻭﻟﻴﻠﺔ ﺍﻟﺠﻤﻌﺔ، ﻓﻤﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻲ
ﺻﻼﺓً ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺸﺮﺍً .
তোমরাজুমার রাত ও জুমার দিনে আমার উপর বেশি বেশি দরূদ পাঠ কর।
যে ব্যক্তি আমার উপর একবার
দরূদ পাঠ করে আল্লাহ তাআলা তার উপর দশবার রহমত নাযিল করেন। (আসসুনানুল কুবরা, বায়হাকী
৩/২৪৯; ফাযাইলুল আওকাত, বায়হাকী ২৭৭; আমালুল
ইয়াওমি
ওয়াল লাইলাহ, ইবনুস সুন্নী ৩৭৯, এর সনদ হাসান পর্যায়ের।)
জুমার দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করার ফজিলত
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি জুমআর রাত্রিতে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য স্বীয় অবস্থানের
জায়গা হতে পবিত্র মক্কা পর্যন্ত একটি নূর হবে”। (দেখুনঃ সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব,
হাদীছ নং- ৭৩৬)
অন্য বর্ণনায় এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
“যে ব্যক্তি জুমআর দিনে সূরা কাহাফ পাঠ করবে, তার জন্য পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত
আলোকময় হবে”। (দেখুনঃ সহীহ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, হাদীছ নং- ৭৩৬)
সূরা কাহাফ [আয়াত ১-১০]
শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابَ وَلَمْ يَجْعَل لَّهُ عِوَجَا
১ সব প্রশংসা আল্লাহর যিনি নিজের বান্দার প্রতি এ গ্রন্থ নাযিল করেছেন
এবং তাতে কোন বক্রতা রাখেননি।
قَيِّمًا لِّيُنذِرَ بَأْسًا شَدِيدًا مِن لَّدُنْهُ وَيُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِينَ الَّذِينَ يَعْمَلُونَ الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ أَجْرًا حَسَنًا
২ একে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন যা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ বিপদের ভয় প্রদর্শন
করে এবং মুমিনদেরকে যারা সৎকর্ম সম্পাদন করে-তাদেরকে সুসংবাদ দান করে যে, তাদের জন্যে
উত্তম প্রতিদান রয়েছে।
مَاكِثِينَ فِيهِ أَبَدًا
৩ তারা তাতে চিরকাল অবস্থান করবে।
وَيُنذِرَ الَّذِينَ قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا
৪ এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করার জন্যে যারা বলে যে, আল্লাহর সন্তান রয়েছে।
مَّا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ وَلَا لِآبَائِهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ أَفْوَاهِهِمْ إِن يَقُولُونَ إِلَّا كَذِبًا
৫ এ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান নেই এবং তাদের পিতৃপুরুষদেরও নেই। কত কঠিন
তাদের মুখের কথা। তারা যা বলে তা তো সবই মিথ্যা।
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا
৬ যদি তারা এই বিষয়বস্তুর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করে, তবে তাদের পশ্চাতে
সম্ভবতঃ আপনি পরিতাপ করতে করতে নিজের প্রাণ নিপাত করবেন।
إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَى الْأَرْضِ زِينَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
৭ আমি পৃথিবীস্থ সব কিছুকে পৃথিবীর জন্যে শোভা করেছি, যাতে লোকদের পরীক্ষা
করি যে, তাদের মধ্যে কে ভাল কাজ করে।
وَإِنَّا لَجَاعِلُونَ مَا عَلَيْهَا صَعِيدًا جُرُزًا
৮ এবং তার উপর যাকিছু রয়েছে, অবশ্যই তা আমি উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে
দেব।
أَمْ حَسِبْتَ أَنَّ أَصْحَابَ الْكَهْفِ وَالرَّقِيمِ كَانُوا مِنْ آيَاتِنَا عَجَبًا
৯ আপনি কি ধারণা করেন যে, গুহা ও গর্তের অধিবাসীরা আমার নিদর্শনাবলীর মধ্যে
বিস্ময়কর
ছিল ?
إِذْ أَوَى الْفِتْيَةُ إِلَى الْكَهْفِ فَقَالُوا رَبَّنَا آتِنَا مِن لَّدُنكَ رَحْمَةً وَهَيِّئْ لَنَا مِنْ أَمْرِنَا رَشَدًا
১০ যখন যুবকরা পাহাড়ের গুহায় আশ্রয়গ্রহণ করে তখন দোআ করেঃ হে আমাদের পালনকর্তা,
আমাদেরকে নিজের কাছ থেকে রহমত দান করুন এবং আমাদের জন্যে আমাদের কাজ সঠিকভাবে পূর্ণ
করুন।
জুমার
দিনে যা আমাদের পালন করা করণীয়।
১।
জুমার দিন গোসল করা। যাদের উপর জুমা ফরজ তাদের
জন্য
এ
দিনে
গোসল করাকে রাসুল (সাঃ) ওয়াজিব করেছেন
(বুখারীঃ
৮৭৭,
৮৭৮,
৮৮০, ৮৯৭, ৮৯৮) ।
পরিচ্ছন্নতার
অংশ হিসাবে সেদিন নখ ও চুল কাটা একটি
ভাল
কাজ।
২।
জুমার সালাতের জন্য সুগন্ধি ব্যবহার করা। (বুখারীঃ
৮৮০)
৩।
মিস্ওয়াক করা। (ইবনে মাজাহঃ ১০৯৮, বুখারীঃ৮৮৭,
ইঃফাঃ৮৪৩)
৪।
গায়ে তেল ব্যবহার করা। (বুখারীঃ৮৮৩)
৫।
উত্তম পোশাক পরিধান করে জুমা আদায় করা। (ইবনে
মাজাহঃ১০৯৭)
৬।
মুসুল্লীদের ইমামের দিকে মুখ করে বসা।
(তিরমিযীঃ৫০৯,
ইবনে মাজাহঃ১১৩৬)
৭।
মনোযোগ সহ খুৎবা শোনা ও চুপ থাকা- এটা ওয়াজিব।
(বুখারীঃ
৯৩৪, মুসলিমঃ৮৫৭, আবু দাউদঃ১১১৩,
আহমাদঃ১/২৩০)
৮।
আগে ভাগে মসজিদে যাওয়া। (বুখারীঃ৮৮১,
মুসলিমঃ৮৫০)
৯।
পায়ে হেঁটে মসজিদে গমন। (আবু দাউদঃ ৩৪৫)
১০।
জুমার দিন ফজরের নামাজে ১ম রাক’আতে সূরা
সাজদা
(সূরা নং-৩২) আর ২য় রাকা’আতে সূরা ইনসান
(দাহর)(সূরা
নং-৭৬) পড়া। (বুখারীঃ৮৯১, মুসলিমঃ৮৭৯)
১১।
সূরা জুমা ও সূরা মুনাফিকুন দিয়ে জুমার সালাত
আদায়
করা। অথবা সূরা আলা ও সূরা গাশিয়া দিয়ে জুমা
আদায়
করা।
(মুসলিমঃ৮৭৭,
৮৭৮)
১২।
জুমার দিন ও জুমার রাতে বেশী বেশী দুরুদ পাঠ।
(আবু
দাউদঃ ১০৪৭)
১৩।
এ দিন বেশী বেশী দোয়া করা।। (বুখারীঃ ৯৩৫)
১৪।
মুসুল্লীদের ফাঁক করে মসজিদে সামনের দিকে
এগিয়ে
না যাওয়া। (বুখারীঃ৯১০, ৮৮৩)
১৫।
মুসুল্লীদের ঘাড় ডিঙ্গিয়ে সামনের কাতারে
আগানোর
চেষ্টা না করা। (আবু দাউদঃ ৩৪৩, ৩৪৭)
১৬।
কাউকে উঠিয়ে দিয়ে সেখানে বসার চেষ্টা না করা।
(বুখারীঃ৯১১,
মুসলিমঃ২১৭৭, ২১৭৮)
১৭।
খুৎবা চলাকালীন সময়ে মসজিদে প্রবেশ করলে তখনও
দু’রাকা’আত
‘তাহিয়্যাতুল মাসজিদ’ সালাত আদায় করা
ছাড়া
না বসা। (বুখারীঃ ৯৩০)
১৮।
জুমার দিন জুমার পূর্বে মসজিদে জিকর বা কোন
শিক্ষামুলক
হালকা না করা। অর্থাৎ ভাগ ভাগ হয়ে, গোল
গোল
হয়ে না বসা, যদিও এটা কোন শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান
হোক
না কেন। (আবু দাউদঃ ১০৮৯)
১৯।
কেউ কথা বললে ‘চুপ করুন’ এটুকুও না বলা। (নাসায়ীঃ
৭১৪,
বুখারীঃ ৯৩৪)
২০।
মসজিদে যাওয়ার আগে কাঁচা পেয়াজ, রসুন না
খাওয়া
ও ধুমপান না করা। (বুখারীঃ ৮৫৩)
২১।
ঘুমের ভাব বা তন্দ্রাচ্ছন্ন হলে বসার জায়গা বদল
করে
বসা। (আবু দাউদঃ ১১১৯)
২২।
ইমামের খুৎবা দেওয়া অবস্থায় দুই হাঁটু উঠিয়ে না
বসা।
(আবু দাউদঃ ১১১০, ইবনে মাজাহঃ ১১৩৪)
২৩।
খুৎবার সময় ইমামের কাছাকাছি বসা। জান্নাতে
প্রবেশের
উপযুক্ত হলেও ইমাম থেকে দূরে
উপবেশনকারীরা
বিলম্বে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু
দাউদঃ
১১০৮)
২৪।
জুমার দিন সূরা কাহফ পড়া। এতে পাঠকের জন্য
আল্লাহ
তায়ালা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়কে আলোকিত
করে
দেন। (হাকেমঃ ২/৩৬৮, বায়হাকীঃ ৩/২৪৯)
২৫।
জুমার আযান দেওয়া। অর্থাৎ ইমাম মিম্বরে বসার পর
যে
আযান দেওয়া হয় তা।(বুখারীঃ ৯১২)
২৬।জুমার
ফরজ নামাজ আদায়ের পর মসজিদে ৪
রাকা’আত
সুন্নাত সালাত আদায় করা। (বুখারীঃ ১৮২,
মুসলিমঃ
৮৮১, আবু দাউদঃ ১১৩০)
২৭।
উযর ছাড়া একই গ্রাম ও মহল্লায় একাধিক জুম’আ চালু
না
করা। আর উযর হল এলাকাটি খুব বড় হওয়া, বা প্রচুর
জনবসতি
থাকা, বা মসজিদ দূরে হওয়া, বা মসজিদে
জায়গা
না পাওয়া, বা কোন ফিতনা ফাসাদের ভয়
থাকা।
(মুগনি লিবনি কুদামাঃ ৩/২১২, ফাতাওয়া ইবনে
তাইমিয়্যাহঃ
২৪/২০৮)
২৮।
ওজু ভেঙ্গে গেলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া।
অতঃপর
আবার ওজু করে মসজিদে প্রবেশ করা। (আবু
দাউদঃ
১১১৪)
২৯।
একান্ত উযর না থাকলে দুই পিলারে মধ্যবর্তী ফাঁকা
জায়গায়
সালাত আদায় না করা। (হাকেমঃ ১/১২৮)
৩০।
সালাতের জন্য কোন একটা জায়গাকে নির্দিষ্ট করে
না
রাখা, যেখানে যখন জায়গা পাওয়া যায় সেখানেই
সালাত
আদায় করা (আবু দাউদঃ৮৬২) । অর্থাৎ আগে
থেকেই
নামাজের বিছানা বিছিয়ে জায়গা দখল করে
না
রাখা বরং যে আগে আসবে সেই আগে বসবে।
৩১।
কোন নামাজীর সামনে দিয়ে না হাঁটা অর্থাৎ
মুসুল্লী
ও সুতরার মধ্যবর্তী জায়গা দিয়ে না হাঁটা।
(বুখারীঃ৫১০)
৩২।
এতটুকু জোরে আওয়াজ করে কোন কিছু না পড়া,
যাতে
অন্যের সালাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় বা মনোযোগে বিঘ্ন
ঘটে।
(আবু দাউদঃ ১৩৩২)
৩৩।
পায়ে হেঁটে মসজিদে যাওয়ার ফযীলত অন্তরে
জাগরূক
রাখা।
৩৪।
হাঁটার আদব মেনে মসজিদে গমন করা।
৩৫।
খুৎবার সময় খতীবের কোন কথার সাড়া দেওয়া বা
তার
প্রশ্নের জবাব দানে শরীক হওয়া জায়েজ। (বুখারীঃ
১০২৯,
মুসলিমঃ ৮৯৭)
৩৬।
হানাফী আলেমগন বলেছেন যে, ভিড় প্রচণ্ড হলে
সামনের
মুসুল্লীর পিঠের উপর সিজদা দেওয়া জায়েজ
(আহমাদঃ১/৩২)
। দরকার হলে পায়ের উপর ও দিতে পারে
(আর
রাউদুল মুরবী)
৩৭।
যেখানে জুমার ফরজ আদায় করেছে, উত্তম হল ঐ
একই
স্থানে সুন্নাত না পড়া। অথবা কোন কথা না বলে
এখান
থেকে গিয়ে পরবর্তী সুন্নাত সালাত আদায় করা।
(মুসলিমঃ
৭১০, বুখারীঃ ৮৪৮)
৩৮।
ইমাম সাহেব মিম্বরে এসে হাজির হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত
তাসবীহ-তাহলীল,
তাওবা- ইস্তিগফার ও কুরআন
তিলাওয়াতে
রত
থাকা।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক ভাবে প্রত্যেক নামাজ হযরত মুহাম্মাদ (ছাঃ) এর শেখানো দেখানো এবং জীবন পরিবার সমাজ রাষ্ট্র পরিচালনার করার তওফিক দান করুক ।(আমিন)
COMMENTS